promito প্রমিত বাংলাঃ ভূমিকা

প্রমিত বাংলা: শুদ্ধ উচ্চারণের পথে এক নতুন অভিযাত্রা

আধুনিক প্রমিত বাংলা উচ্চারণের অগ্রদূত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত সহযোগী অধ্যাপক এবং ধ্বনিতত্ত্বের উজ্জ্বল বাতিঘর, নরেন বিশ্বাসের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। 
বাংলা ভাষার অমৃতধারা আমাদের পরিচয়ের মূল ভিত্তি।  আমাদের মাতৃভাষা, শুধু একটি ভাষা নয়; এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক। এই ভাষার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বর্ণ আমাদের পরিচয় বহন করে। কিন্তু আমরা কি আমাদের এই ভাষাকে তার শুদ্ধতম রূপে চর্চা করছি?
আমি মাহাথির মোহাম্মদ মিজান, আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি promitobangla.com-এ, যেখানে আমরা প্রমিত বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ, বানান, এবং সঠিক ব্যবহারের প্রতি নিবেদিত।
প্রমিত বাংলা সেই সর্বজনগ্রাহ্য ভাষার রূপ, যা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, গণমাধ্যম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হয়। অন্যভাবে বললে, শুদ্ধ ব্যাকরণ মেনে সঠিক বানানে লিখিত এবং শুদ্ধ উচ্চারণে কথিত বা পঠিত ভাষাই প্রমিত বাংলা।

প্রমিত বাংলা তিনটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত:
1.    বাংলা ব্যাকরণ: অর্থাৎ ভাষার গঠন ও নিয়ম।
2.    সঠিক বানান: ভাষার লিখিত রূপের নির্ভুলতা। এবং
3.    নির্ভুল উচ্চারণ: ভাষার ধ্বনিগত শুদ্ধতা।
আমাদের এই অনলাইন মাধ্যমে আমরা উপরের তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য প্রমিত উচ্চারণের প্রচলন নিশ্চিত করা।

কেন প্রমিত বাংলা জরুরি?
আমাদের জীবনে বাংলা ভাষার ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও প্রয়োগ না জানার কারণে:
•    ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
•    ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।
•    ভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়।
প্রমিত উচ্চারণের প্রধান যে সব চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হয় সেগুলো হলঃ
•    আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব: আমরা জানি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন উপভাষার প্রচলন রয়েছে।
•    সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের কারণে কিছু ক্ষেত্রে শুদ্ধ উচ্চারণকে অগ্রাহ্য করা হয়।
•    ইংরেজি এবং অন্যান্য বিদেশি ভাষার আধিপত্য।
•    প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: যেমন উচ্চারণ শেখার পর্যাপ্ত ডিজিটাল সরঞ্জামের অভাব। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহীন ভাষার লাগামহীন প্রচার এবং প্রসার।
এই বাধাগুলো কাটানোর জন্য সচেতনতা এবং প্রমিত বাংলার প্রতি অকৃত্তিম ভালবাসা আর আন্তরিকতা প্রয়োজন।

এছাড়া যেসব মৌলিক বাধা রয়েছে সেগুলো হলোঃ
১। স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সঠিক উচ্চারণ স্থান এবং প্রমিত উচ্চারণ না জানা। বিশেষ করে ঘোষ অঘোষ, অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ বর্ণের উচ্চারণ যথাযথভাবে না করা।
২। এক বর্ণ একাধিক উচ্চারিত ধ্বনি। যেমনঃ “অ” তার নিজস্ব ধ্বনি অ এর মত উচ্চারিত হলে ও বহু কারণে ও বা ওকারের মত উচ্চারিত হয়। একইভাবে `এ` স্বরধ্বনিটি বিভিন্ন কারণে অ্যা বা অ্যা কারের মত উচ্চারিত হয়। একারণ গুলো না জানা প্রমিত উচ্চারণের অন্যতম একটি বাধা।
৩। একাধিক বর্ণের একই ধ্বনি: যেমনঃ  শ, ষ, স এই তিনটি শ ইংরেজি ‘sh’ ধ্বনির মত উচ্চারিত হয় কিন্তু ব্যবহারভেদে বিভিন্ন কারণে এই শ-গুলো ইংরেজি S এর মত ধ্বনির সৃষ্টি করে। এ কারণগুলো না জানাও একটি বাধা। 
৪। ঞ, জ্ঞ, ঞ্জ  এসব ধ্বনি সমুহের পদে অবস্থান অনুযায়ী রয়েছে বৈচিত্রময়  উচ্চারণরীতি । মিঞা এর ঞ  এবং চঞ্চল এর ঞ এর উচ্চারণ এক নয়, জ্ঞান এর জ্ঞ এবং  বিজ্ঞান এর জ্ঞ এর উচ্চারণও এক না।
৫। তারপর রয়েছে যুক্তব্যঞ্জন এবং ফলার জটিলতা: যেমন ব ফলা, ম ফলা, য ফলা, ল ফলা, র ফলা ইত্যাদি ফলাসমূহের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার এবং উচ্চারণরীতি।
৬। হ স্বাধীনভাবে উচ্চারণে কোন সমস্যা নেই। কিন্ত হ যখন অন্য ধ্বনি বা বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন সঠিক নিয়ম না জানা থাকলে প্রমিত উচ্চারণ বাধাগ্রস্ত হয়।
৭। বিসর্গ এবং চন্দ্রবিন্দুর প্রমিত ব্যবহাররীতি না জানা। যেমন বাঃ এর বিসর্গ  এবং  দুঃখ`র বিসর্গ এর উচ্চারণে প্রভাব এক না।
৮। বাংলাভাষায় বহু ভাষার বহু বিদেশি শব্দের উপস্থিতি রয়েছে। এসব বিদেশী শব্দেরও সঠিক উচ্চারণের নিয়ম রয়েছে, যা জানা জরুরী।
বাংলা উচ্চারণে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস তার অসাধারণ গবেষণা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক পণ্ডিতদের গবেষণা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও সূত্র প্রণয়ন করেছেন। এই গবেষণায় তিনি বাংলা ভাষার পণ্ডিতদের, যেমন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ডঃ সুকুমার সেন, ধ্বনিতত্ত্ববিদ মুহম্মদ আবদুল হাই এবং ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের গবেষণালব্ধ ধ্বনিবিজ্ঞান ও উচ্চারণের রচনাবলীর সহযোগিতা নিয়েছেন।
এসব সূত্রাবলী অনুসারে দেখা গেছে, বাংলা ভাষার প্রায় প্রতিটি শব্দ নির্দিষ্ট একটি ছক বা ফর্মেটে ফেলে উচ্চারণ করলে প্রমিত বা সঠিক উচ্চারণ পাওয়া সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে আমরা কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করতে পারি: যেমনঃ
1.    যদি শব্দের শুরুতে স্বাধীন বা ব্যঞ্জনে যুক্ত "অ" থাকে এবং  তার পরবর্তী বর্ণে "ি-কার" বা "ী-কার"" যুক্ত হয়, তবে সেই আদ্য অ বর্ণটি "ও" বা "ওকার"-এর মতো উচ্চারিত হয়।
উদাহরণ:
o    অতি → ওতি
o    পতি → পোতি
o    অতীত → ওতিত্‌
o    নদী → নোদি
অথবা
2.    শব্দের শুরুতে "অ"-যুক্ত ব্যঞ্জনের সঙ্গে "র-ফলা" থাকলে সেই "অ"-এর উচ্চারণও "ও" বা "ওকার"-এর মতো হয়।
উদাহরণ:
o    প্রতি → প্রোতি
o    গ্রহ → গ্রোহো
o    স্রবণ → স্রোবোন্‌
অথবা,
3.    "উৎ" (উদ্‌) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দে "ৎ" (দ্‌) এবং "ব-ফলার ব" সাধারণত অবিকৃত থাকে। অর্থাৎ ব যুক্তবর্ণকে দ্বিত্ব না করে ব টি উচ্চারিত হয়।
উদাহরণ:
o    উদ্বেগ – উদ্‌বেগ, 
o    উদ্বোধন – উদ্‌বোধোন্‌ 
o    উদ্বিগ্ন – উদ্‌বিগ্‌নো
এইসব সূত্রাবলীকে ভিত্তি করেই বাংলা প্রমিত উচ্চারণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে ধারাবাহিক বিস্তারিত  আলোচন থাকবে আপনাদের এই promitobangla.com এ।
এছাড়া আরও থাকছেঃ
•  একটি প্রমিত উচ্চারণ অভিধান:
যেখানে রয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি শব্দের সঠিক উচ্চারণ। প্রতিটি শব্দের লিখিত উচ্চারণের পাশাপাশি রয়েছে অডিও লিংক, যাতে ক্লিক করে আপনি বর্ণটির প্রমিত উচ্চারণ শুনতে পাবেন।
•  একই সাথে থাকছে প্রতিটি শব্দের বাংলা ও ইংরেজি শব্দার্থ । অর্থাৎ অর্থাৎ promitobangla.com  বাংলা থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি অভিধান ও বটে।
•  আরও থাকছে বাংলা একাডেমি অনুমোদিত বাংলা বানানের নিয়মাবলী এবং ব্যাকরণের ভিত্তিতে বানানের নিয়মাবলী ও।
পরিশেষে অধ্যাপক নরেন বিশ্বাসের কথার প্রতিধ্বনি করে বলতে চাই, কোনো অভিধানই  একবারে ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না। promitobangla.com-ও তার ব্যতিক্রম নয়। ভাষা একটি চলমান প্রক্রিয়া।  প্রমিত বাংলা শুদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।  তাই, আমরা আপনাদের মতামত ও পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিয়ে promitobangla.com-কে আরও উন্নত করতে চাই।
ভাষা শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ আমাদেরকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।

সর্বদা ভাল থাকুন। 
শুভাচ্ছান্তে,
মাহাথির মোহাম্মদ মিজান
 

Follow us

©2025 website developers hub.