Wednesday May 08, 2024

উৎসর্গ


নরেন বিশ্বাস

(১৬ নভেম্বর ১৯৪৫- ২৭ নভেম্বর ১৯৯৮)

অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস। বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় অধ্যাপক, বাচিক শিল্প বিশেষজ্ঞ, গবেষক, লেখক, বাক শিল্পের প্রতিটি অঙ্গনের সকলের অতি পরিচিত প্রিয় নাম এবং প্রমিত বাংলা উচ্চারণের পথিকৃৎ। বাংলা উচ্চারণ গবেষণায় তার অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি তাঁর শিক্ষকতা জীবনে যেমন পড়িয়েছেন বাংলা, তেমনি আমৃত্যু গবেষণা করেছেন বাংলা ভাষা নিয়ে। শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য তিনি তৈরি করেছেন উচ্চারণ বিষয়ক বহু সূত্র। বাংলাদেশে স্বনামধন্য উচ্চারণ বিসয়ক প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও দেশের প্রায় সব প্রমিত বাংলা উচ্চারণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিল তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। 'ঐতিহ্যের অঙ্গীকার' নামে বাংলা সাহিত্যের ওপর ১৩ পর্বের ক্যাসেট তিনি বের করেন । “চর্যাপদ থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্য” তিনি অসাধারণভাবে বন্দি করেছেন ম্যাগনেটিক ফিতায়। এবং এর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন কলকাতার 'আনন্দ পুরস্কার' । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স করেন যথাক্রমে ১৯৬৫ ও ১৯৬৬ সালে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নাট্যাচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তিনি নানা আন্দোলনে অগ্রদূত ছিলেন।

এমএ পাস করেই অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৬-৭৬ সাল পর্যন্ত মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজ ও ১৯৭৬ থেকে আমৃত্যু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন । নাটক, আবৃত্তি, উচ্চারণ, কথন-এর মতো শৈল্পিক কর্মের কারণে তিনি অনেক খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর রচিত জনপ্রিয় কিছু বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : “বাংলা উচ্চারণ অভিধান”, “প্রসঙ্গ বাংলা ভাষা”, “বাংলা উচ্চারণ সূত্র”, “নিহত কুশীলব”, “রৌদ্রদিন”, “ক্রুশবিদ্ধ যীশু”, “তমসীর ফাঁসি” ইত্যাদি। বাকশিল্পী নরেন বিশ্বাস বাংলা শুদ্ধ উচ্চারণকে প্রাঞ্জল করে যেমন দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে সহজীয়া করে তুলেছিলেন তেমনি আবৃত্তি ও নাটকের দলগুলোর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই শুদ্ধ উচ্চারণের কর্ম-বিস্তৃতি আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বের বাংলাভাষী বাক শিল্পীদের ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের গণ-মাধ্যমগুলিতে বিশেষ করে রেডিও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে নরেন বিশ্বাসের শুদ্ধ উচ্চারণ সূত্রাবলী ও বাংলা উচ্চারণ অভিধান একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ হিসাবে গৃহীত। অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস সারা বিশ্বের বর্তমান ও অনাগত বাংলাভাষীদের যে অপরিশোধনীয় ঋণের জালে জড়িয়ে রেখেছেন, সে ঋণের অতি সামান্য ঋণ পরিশোধের প্রত্যাশায় এই ক্ষুদ্র উৎসর্গ।

মাহাথির মোহাম্মদ মিজান